পর্ব এক
অঘটন কখনো জানিয়ে আসেনা ঠিকই, কিন্তু এমন অতর্কিতে হানা দেওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারে না হয়তো। একটা মৃত্যু কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো করে দিল। একাকি নিঃসঙ্গ জীবনে হঠাৎ করে এল উটকো ঝামেলা। প্রায় ১০ বছর ধরে একা থাকা এনাক্ষির জীবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এতো মানুষজন যে এখনো আছে সেটা এই বিপদ না এলে কোনদিনও বুঝতেই পারত না সে। যদিও তার বেশিরভাগই কৌতুহল, আলগা পিড়ীত ও ‘দেখ কেমন লাগে’ এইসব উদ্দেশ্যে হাজির হয়েছে। আর এটাই এনাক্ষির বরাবর অপছন্দ। তাই আজ সে একা, একদম একা।
এনাক্ষি লাহা স্টেট ব্যাঙ্কে কর্মরত বছর ৪০ এর একাকি মহিলা। তার বাবা গত হয়েছেন, যখন তার বয়স মাত্র বারো। রেলে চাকরি করার সুবাদে সেই চাকরিটা পায় তার মা। তাই আর্থিক স্বচ্ছলতার খুব একটা অভাব হয়নি এনাক্ষির। উপরি পাওনা ছিল তার নিঃসন্তান মামার বেশ কিছু সম্পত্তি। তবে অভাব রয়ে গেল কৈশোরের। এক লহমায় মেয়েটা যেন অনেকটা বড় হয়ে গেল। বুঝতে শিখল এই স্বার্থপর আত্মীয় স্বজন ভরা পৃথিবীতে তার মা একাই বাবা – মা দুজনের ভূমিকা পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তাই ওর জীবনে মা’য়ের আগে কেউ নেই, কিছু নেই।
না, গল্পের শুরুর উল্লিখিত মৃত্যুটি এনাক্ষির মা’য়ের নয়। তিনিও এনাক্ষিকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন বছর আটেক। এবারের মৃত্যুটি এক মহিলার। তবে বিষয়টা হলো এনাক্ষি সেই মৃত মহিলাকে চেনেও না। এখন প্রশ্ন হলো এক অচেনা অজানা মহিলার মৃত্যু এনাক্ষির জীবন এলোমেলো করল কীভাবে? আসলে মহিলার মৃতদেহ পাওয়া যায় তার সদ্য কেনা ফ্ল্যাটে, যার গৃহপ্রবেশ আর মাত্র তিনদিন পর।
গত রাতের কথা
গতকাল রাত তখন সাড়ে ন,টা, হঠাৎ ফোন আসে এনাক্ষির কাছে। ‘শেষের কবিতা’ আবাসনের ফেসিলিটি ম্যানেজার। উনি যা বললেন, তাকে সংক্ষিপ্ত করলে দাঁড়ায়, এক মহিলার নিখোঁজের তল্লাশি করতে পুলিশ এসেছে আবাসনে। কারণ সেই মহিলার মোবাইলের শেষ লোকেশন দেখাচ্ছে এই আবাসনে। তাই এনাক্ষিকে একবার আসতে হবে। একটু হোঁচট খেয়ে ম্যানেজার বলেছিলেন, “ম্যাডাম আপনার ফ্ল্যাট নিয়ে…” কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ওপাশে যে বক্তা বদল হয়ে গেল, বুঝেছিল এনাক্ষি। “হ্যালো আমি পূরব প্রধান, গড়িয়া থানার ওসি। আপনাকে একবার আসতে হবে এখানে যত জলদি সম্ভব।“ লাইনটা কেটে গেল। অবাক হয়ে বসে পড়ল এনাক্ষি। সবটা যেন কেমন সিলেবাস বর্হিভূত প্রশ্নপত্রের মতো। কি করবে জানে না, কিন্তু যেতে তো হবে।
রাত প্রায় ১টা, এনাক্ষি এখন বসে আছে গড়িয়া থানায়। যখন গাড়ি ড্রাইভ করে শেষের কবিতার উদ্দেশ্যে ও রওনা হল, তখনও বিষয়টাকে ওতো গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেছিল সবার ফ্ল্যাট ই তো পুলিশ দেখছে। আর একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে ওর কাজ পুলিশকে সাহায্য করা। কিন্তু ও দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি, যে বেডরুমে ও একটা বেলাও এখোনো কাটায়নি, সেখানে আলমারির মধ্যে কারোর দেহ লোকানো থাকতে পারে। এখনো চোখ বন্ধ করলে সেই রক্তাক্ত দেহ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে। শুধু ওই দেহ না, অন্তত জোড়া বিশ জিজ্ঞাসু চোখ তখন এনাক্ষির দিকেও ছিল।
শুধু ধারাবাহিক নয়, আমার ঝুলিতে আছে বেশ কিছু ছোটগল্প। পড়তে আগ্রহী হলে চটপট খুলে ফেলুন অনুলিপির গল্পসল্প পেজ। আর পড়ে কেমন লাগল, একটু জানাবেন প্লিজ।
অনুলিপির আপডেট পেতে মুঠোফোনের খুব কাছের সঙ্গী ফেসবুকে যান। আর চোখ রাখুন অনুলিপির ফেসবুক পেজে।