পর্ব দুই

কথায় আছে পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা। নাহ! তেমন কিছু এখনো অব্দি হয়নি এনাক্ষি বোঝেনি। তবে তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা’ই প্রবল। কারণ ঘটনাটা যে খুব সামান্য নয়, তা তো একজন ছোট বাচ্ছাও বুঝতে পারবে। আর পূরব প্রধান বললেন, বড় সাহেব আসছে।। এখনো চোখ বন্ধ করলে এনাক্ষি শুধু ওই রক্তাক্ত দেহটা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু এসব হলো কি করে? পূরব ছেলেটি বয়সে এনাক্ষির থেকে বেশ ছোট বলেই মনে হয়। বিভিন্ন ভাবে সে প্রশ্ন করেছে, এমন ঘটনা কি করে ঘটল? কিন্তু এনাক্ষি তো বোঝাতেই পারছে না, এমন ঘটনা কি করে ঘটল, ও নিজেও সেটা বুঝতে পারছে না। যদিও পুলিশ ওর মুখের কথা বিশ্বাস’ই বা করবে কেন? কেউ কি আর খুন করে স্বীকার করে এদের কাছে। আধঘন্টা আগে পূরব বলে গেছে মনে করার চেষ্টা করতে ওর কোনো শত্রু আছে কিনা, যে বা যারা ওকে এমনভাবে ফাঁসাতে পারে। এনাক্ষির তো তেমন কাউকে মনে পড়ছে না। হ্যাঁ এটা ঠিক যে এনাক্ষির সাথে কারোর তেমন সদ্ভাব নেই, তাই বলে এমন শত্রুতা? এখনো পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়নি, যে দেহটি পাওয়া গেছে সেটি ওই নিখোঁজ মহিলারই কিনা, কিন্তু লাশ তো একজনের পাওয়া গেছে, এটাই অনেক বড় ব্যাপার। হাজারো প্রশ্ন মনে জাগছে। ওর এমন বিপদের দিনে ও কাকে পাবে পাশে? কাল সকালের মধ্যে হয়তো অফিসে সব জেনে যাবে, ওর চাকরির কি হবে? আর সম্মান? ভাবনার জাল কাটে এক পুলিশের আগমনে। এনাক্ষিকে বলে, “আপনার পরিচিত কারোর নম্বর দিন, পূরব চাইছে।“ এনাক্ষি দু দিকে মাথা নাড়ে। ভদ্রলোক একটু বিরক্ত হয়ে বলেন, “দেখুন এটা আমাদের কর্তব্য।“ এনাক্ষি মাথা নীচু করে বলে,”আমার পরিচিত এমন কেউ নেই, যাকে খবর দেওয়া যায় বা দেওয়ার প্রয়োজন।“ ভদ্রলোক অবাক হয়ে বলে, “কেউ নেই?” এনাক্ষি আবার বলে, “বিশ্বাস করুন আমি কাউকে খুন করিনি। আমি কেন খুন করবো?” “দেখুন এই মুহুর্তে আপনাকে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কোনটাই করছি না।” বলে তিনি চলে যায়। দু’চোখ ভরা জল নিয়ে মাথা নামিয়ে টেবিলে রাখে এনাক্ষি, মনে মনে বলে মা তুমি কেন আমায় ছেড়ে চলে গেলে।

এনাক্ষি - Image of sad girl    কতক্ষন এভাবে কাটল জানে না, হঠাৎ এনাক্ষির মনে হল কে যেন ওকে ডাকছে। ও কি ঘুমিয়ে পড়েছিল? “চলুন, আপনাকে ইন্টারোগেসান রুমে যেতে হবে। স্যার এসে গেছেন।“ সামনে দাঁড়ানো পুলিশ কর্মী তার’ই উদ্দেশ্যে বলছে। এনাক্ষি একটু থতমত খেয়ে বলল, আবার ইন্টারোগেসান? আমি তো কাল সবকিছু পূরব বাবুকে বলে দিয়েছি। পুলিশ মহাশয় হালকা হেসে বলল, “ভালো তো, এখন সেগুলোই আবার স্যারকে বলবেন চলুন।“ পা চালাতে চালাতে এনাক্ষি জিজ্ঞাসা করল, “এখন কটা বাজে?” লোকটি ওর  দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল, “ভোর চারটে। ঘড়ি তো আপনার হাতেও আছে ম্যাডাম।“ সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে এনাক্ষির। মনে মনে ভাবল, আর ঘড়ি দেখে কি হবে? সময় তো এমনিতেই খারাপ যাচ্ছে ওর। সহজে কি আর এসব থেকে নিস্তার মিলবে?

ওর জীবনে সব ঝড়, সাইক্লোন যে একসাথে আসবে, এতটা বোধহয় কল্পনাও করেনি এনাক্ষি। ইন্টারোগেসান রুমের দরজায় পা যেন আটকে গেল ওর। মনে মনে ভাবল, ভগবান, তুমি কোন্ পাপের শাস্তি দিচ্ছ? ওর ফ্ল্যাটে লাশ পাওয়া যেতেও এতটা অবাক হয়নি, যতটা এখন হলো। কারণ সামনে যিনি বসে আছেন ওকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, অর্থাৎ থানার বড়বাবু, তিনি যে এনাক্ষির প্রাক্তন প্রেমিক পথিকৃৎ রায়। একসময় তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, এটা যেনেও যে সরাসরি পথিকৃতের কোন দোষ ছিল না। হয়তো এনাক্ষির এত দেমাকের জন্য’ই আজ ওর এই অবস্থা। তবে অবাক হওয়া বিষয়টা যে একতরফা এনাক্ষির ক্ষেত্রে নয়, তা পথিকৃতের মুখ দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে। পথিকৃৎ কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি, এমন একটা পরিস্থিতিতে ওরা আবার মুখোমুখি হবে। যাকে একসময় নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসত, তাকে কোনো খুনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। আচ্ছা ভালোবাসার অনুভূতিটা কি সত্যিই অতীত? নাকি এখনো মনের কোনো বন্ধ দরজার পিছনে লুকানো আছে। “স্যার উনি ভিতরে আসবেন?” পূরবের কথায় যেন দুজনেরই ভাবনার চটকা ভাঙল। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে পথিকৃৎ বলল, “এসো, I mean আসুন।“

‘শেষ থেকে শুরু’ কথায় থাকলেও গল্প তো শুরু থেকে পড়তে হয়। তাই পর্ব দুই বুঝতে চটপট পড়ে নিন অঘটন- পর্ব এক

অনুলিপির ফেসবুক পেজ ফলো করতে ভুলবেন না যেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *