ছোটবেলার বড়দিন – নামটা শুনলেই মন যেন টাইম মেশিনে করে পৌঁছে যায় স্কুলজীবনের চৌকাঠে। ছোটবেলায় নতুন বছরের ক্যালেন্ডার পেয়ে আগে যে বিশেষ বিশেষ দিনগুলির ওপর চোখ বোলাতাম, বড়দিন তার মধ্যে অন্যতম। বড়দিনের কথা ভাবলেই তখন মাথায় আসত- প্রথমত, স্কুল, টিউশন সব ছুটি। মানে পড়তে বসতে হবে না। দ্বিতীয়ত, বাবার অফিস ছুটি। আর তৃতীয়ত ঘুরতে যাবো। বাবার কাছে আবদার করতাম কোলকাতা দেখার।
ঘুম থেকে উঠে দেখতাম, মা চায়ের কাপ আর দুধের গ্লাস সাজাচ্ছে আর বাবা কেক কেটে আমাদের জন্য রেডি করছে। সকালটা সেদিন একটু তাড়াতাড়ি হতো, কারন জানতাম পড়তে বসতে হবে না, আর তার থেকেও বড় কারন ছিল, বাবা আগের দিন রাতে জানিয়ে দিত, যে দেরি করে উঠবে, সে ঘুরতে যাওয়া থেকে বাদ।
বড়দিন বলতে এখনো মনে পড়ে, বাবা-মা- দাদার হাত ধর, কখনোবা কাকারা সবাই মিলে যেতাম কোলকাতায়। গন্তব্যের তালিকায় কখনো থাকত, ভিক্টোরিয়া বা বিড়লা তারামন্ডল, চিরিয়াখানা বা বিড়লা মিউজিয়াম, জাদুঘর বা নেহেরু শিশু মিউজিয়াম। যদি কোলকাতা যাওয়া না হতো, চলে যেতাম ব্যান্ডেল চার্চ বা হুগলির ইমামবাড়া অথবা চুঁচুঁড়ার ছোট্ট গীর্জাতে।
হয়তো তখন হাতের মুঠোয় মোবাইল ছিল না, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা হোয়াটস্যাপে শতাধিক বন্ধুর শুভেচ্ছা বার্তা আসতো না, তবে কখনো কখনো বন্ধুর কাছ থেকে পেতাম হাতে তৈরি বা মাত্র এক – দু টাকায় কেনা ছোট্ট কার্ড, যেগুলো অনেক বছর জমিয়ে রাখতাম যত্ন করে। আজকালকার মতো মাল্টিপ্লেক্স বা শপিংমল গন্তব্যের তালিকায় জায়গা করেনি। খাদ্যতালিকায় বিশেষ স্থান পায়নি পিৎজা, বার্গার, হটডগ, ক্যাপুচিনো, কোল্ডকফি। কিন্তু তখন সামান্য সামান্য জিনিস গুলোই ছিল আমাদের কাছে অমূল্য। বাবা- মায়ের হাত ধরে ঘুরতে যাওয়া, রাস্তার ধারে বা ছোটোখাটো কোনো রেস্টরেন্টে সামান্য কিছু খাওয়া, ভিড় বাস বা ট্রেনে যাওয়া- আসা, কারন তখন মোবাইলে সার্চ করলেই হাজির হতো না অ্যাপ ক্যাব। তবু দিনের শেষে মনে এতটুকু অপ্রাপ্তির ছোঁয়া থাকত না। হয়তো আজকাল এর থেকে অনেক বেশি কিছু পেয়েও সবার মনে সেই সম্পূর্ণ প্রাপ্তির আনন্দটুকু আসেনা।
আমার ছোটবেলার বড়দিন কাটতো এমনভাবেই, পরিবারের সাথে ঘুরে বেড়িয়ে। তোমাদের ছোটবেলার সাথে কি কোথাও মিল খুঁজে পাও? জানাতে ভুলো না কমেন্ট করে।
ছোটবেলার বড়দিন – এর মতো আরো কিছু সুন্দর অনুচ্ছেদ পড়তে অবশ্যই ক্লিক করুন প্রথম পাতা।