রথযাত্রা – আজ রথযাত্রা। জগন্নাথ দেব তার ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে সাথে নিয়ে যাবে মাসির বাড়ী। আমার জন্মশহর শ্রীরামপুর। আর শ্রীরামপুর বলতে সবার আগে মনে আসে মাহেশের রথের কথা। তাই রথযাত্রার দিনটি আমাদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ন। পুরীর রথযাত্র্রার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও প্রাচীনতম রথযাত্রা হয় মাহেশে। সেই যে বঙ্কিমচন্দ্রের রাধারানী এসেছিল মাহেশের রথের মেলায় বুনোফুলের মালা বিক্রী করতে, সেই রথের মেলা আজও হয় স্বমহিমায়। প্রায় ৬২৭ বছরের প্রাচীন এই রথটান দেখতে লক্ষাধিক বঙ্গবাসী ভিড় জমায় মাহেশে। জি. টি. রোডে বেশ কয়েক ঘন্টার জন্য স্তব্ধ হয় যান চলাচল। দেবতা বছরে একটিবার মাত্র মাসির বাড়ী বেড়াতে যায় বলে কথা। এটুকু স্তব্ধতা তো মেনে নিতেই হবে। ছোটবেলা থেকেই রথটান দেখা নিয়ে আমার বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু রথের দিন মানেই জিলিপি, বাদামভাজা আর পাঁপড় ভাজা খাওয়ার দিন। আর স্কুলজীবনে পেতাম পড়ার ছুটি। ছোটবেলার রথের দিন কাটত একদম অন্যরকমভাবে। প্রথমে ঠাকুমা, পরে বাবার কাছে আবদার করতাম রথ কিনে দেওয়ার। সেই রথকে নানা ফুল মালায় সাজিয়ে,জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার ছোট্ট মূর্তি বসিয়ে, পয়সা দেওয়ার জন্য একটা ছোট বাটি রেখে দাদা, দিদির সাথে বেড়োতাম রথ টানতে। রাস্তার খানাখন্দ থেকে রথকে বাঁচাত দাদা। আর যত রাত ই হোক বাবা, কাকা, জ্যেঠুরা অফিস থেকে ফিরলে আমাদের রথকে আগে প্রণাম করে টাকা দিতে হতো। তখনকার দিনে অন্য অনেক কিছুর অভাব থাকলেও ভরপুর ছিল এই সরলতাগুলো। আজকাল রথের দিন রাস্তাঘাটে এমন ছোট্ট মানুষদের ছোট্ট রথটান তেমন দেখা যায় না। রথের দিন এখনো রাস্তায় নামে অজস্র মানুষজন, নানান বয়সের, নানান সম্প্রদায়ের। শুধু একবার রথের দড়ি ধরার জন্য মানুষের আকুলতা দেখার মতো। শুধুই কি রথটান? রথের মেলা, তার আকর্ষন ও কিছু কম নয়। ছোটবেলা থেকে দেখে আসা রথের মেলার আকর্ষন এখনো একই রকম আছে। ছোটবেলায় বাবার ছুটির দিন বিকালবেলা মেলায় যাব মানে তার আয়োজন হতো সকাল থেকে। বড় হয়ে বন্ধুদের সাথে মেলায় যাওয়ার আকর্ষন ছিল আবার অন্যরকম। আজ এত বছর পরও সেই আকর্ষনের কমতি হয় না। তবে শৈশবের সেই দিনগুলো আজও হাতছানি দিয়ে ডাকে।
আমার স্মৃতির ঝুলি থেকে টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতাগুলি যুক্ত করে তৈরি করি ভ্রমনকথা। এমনই একটি হল একদিনের রাজা সাজা। অবশ্যই পড়বেন কিন্তু…
রথের কত খুঁটিনাটি তথ্য আমি জানিই না। সব কি আর জানা সম্ভব বলুন? কিন্তু আপনারা চাইলে জানতেই পারেন। বিশেষত আমার শহর শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা সম্পর্কে জানতে গুগলে খুঁজে নিন মাহেশের রথযাত্রা উইকিপিডিয়া।