পর্ব এক:

“আর এক চা হবে?” খবরের কাগজে চোখ রেখেই বললেন অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী প্রিয়ব্রত সরকার। হাতে লাল কালির পেন নিয়ে মনযোগ সহকারে কি যেন খুঁজে চলেছেন তিনি। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন তার স্ত্রী সোনালী। ঝাঁঝাঁলো গলায় বললেন, “পারবো না। এই এক হয়েছে, রবিবার হল তো কাগজ- কলম নিয়ে বসে পড়লেন। আর যেন কোনো কাজ নেই। এত তাড়া ছেলের বিয়ে দেওয়ার। আজকাল মেয়ের বাবা-মা’রাও তাদের বিয়ের জন্য এত অস্থির হয়না। “কাগজ থেকে মূখ তুলে প্রিয়ব্রত বললেন, “আহা! রাগ করছো কেন? ছেলে বড়ো হয়েছে, চার বছর হল চাকরি করছে, পাকা চাকরি, তা বিয়ে তো দিতেই হবে। বুবাই যদি নিজেই কাউকে পছন্দ করে নিত, তাহলে তো আর কোনো ঝুট- ঝামেলাই থাকত না।“ “তাই বলে সব কাজ ফেলে রবিবার হলেই শুধু পাত্রী খুঁজে যাবে?” সোনালির গলায় স্পষ্ট বিরক্তি। স্ত্রীকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে প্রিয়ব্রত বলেন, “আরে গিন্নি, একটা ভালো মেয়ে পাওয়া কি এতই সোজা? আমার সাফ কথা, ছেলে যদি নিজে পছন্দ করতো তো আলাদা, কিন্তু তা যখন সে করতে পারেনি, তখন আমি ওর জন্য খুঁজে খুঁজে সেরা মেয়ে নিয়ে আসব। স্ত্রী’র দিকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলেন, “দেখো একবার, কেউ নামমাত্র ডিভোর্সী, তো কেউ চায় বিদেশে চাকরি করা পাত্র বা ডাক্তার পাত্র। কাগজটা সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সোনালি বললেন, “তুমি দেখো, আমার আর দেখে কাজ নেই।

ওইদিন সন্ধ্যাবেলা

ছুটির দিন, সন্ধ্যাবেলা বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরে ছোট্ট বাগানটা পেড়িয়ে আসতে আসতেই বাবা- মায়ের গলার আওয়াজ পেল ঋতম। আর এটাও বুঝতে পারল দুজনের মধ্যে কথা নয়, কথা কাটাকাটি হচ্ছে। বসার ঘরে ঢুকে ঋতম বলল, “কি হল আবার? বাগান থেকে তোমাদের ঝগড়া শোনা যাচ্ছে।“ সোনালি গম্ভীর গলায় বললেন, “সেটা তুই তোর বাবাকেই জিজ্ঞাসা কর।“ ঋতম বাবার দিকে তাকাতেই প্রিয়ব্রত তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন, “তেমন কিছু না, আমি আজ তোর জন্য একটি পাত্রী দেখেছি, তোর মা’কে দেখতে যেতে বলছি, তা তোর মা যেতে চাইছে না, বাপ-মা মরা মেয়ে মামার বাড়িতে মানুষ বলে।“ ঋতম রেগে গিয়ে বলে, “বাবা আবার শুরু করেছো? আমি এখন বিয়ে করবো না। কতবার বলবো বলো তো আর? আমি এখনও বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই।“ প্রিয়ব্রত কিছু বলার আগেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায় ঋতম।girl

দিন তিনেক পর

তখন রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। ঋতম ল্যাপটপ কোলে ওয়েব সিরিজে ডুবে রয়েছে। দরজায় কি হালকা টোকা পড়ল? মনে তো হল। কে জিজ্ঞাসা করায় নীচু স্বরে বাবার গলা শুনতে পেল সে। বাবা এত রাতে? এক অজানা আশঙ্কায় প্রায় লাফিয়ে গিয়ে দরজা খুলল ঋতম। উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে? শরীর খারাপ করছে?” সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রিয়ব্রত প্রশ্ন করলেন, “তোর তো এখনও ঘুমানোর সময় হয়নি নিশ্চই?” “না তা হয়নি, কিন্তু হয়েছে টা কি? মায়ের কি কিছু হয়েছে?” ঋতমের মন থেকে যেন উদ্বেগ কাটছে না। ছেলের বিছানায় গিয়ে বসে প্রিয়ব্রত বললেন, “নারে, কারো কিছু হয়নি। অত চিন্তা করিস না তো। তুই কি সিনেমা দেখছিস নাকি ফেসবুক?” ঋতম যেন একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বাবার পাশে গিয়ে বসে বলল, “ওহ! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মা ঘুমিয়ে পড়েছে তো? “প্রিয়ব্রত সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়তে ঋতম বলল, “তা তুমি এখনো জেগে কেন?” প্রিয়ব্রত একটু চুপ করে থেকে বলল, “আসলে তোর সাথে একটু কথা ছিল। “ঋতম উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “দেখো বাবা বিয়ে নিয়ে যদি কোনো কথা হয়, তো আগেই বলে দি আমার এসব শুনতে এখন ভালো লাগছে না।“ “আমার কথা টা তো শোন?” “আচ্ছা বলো।“ একটু সময় নিয়ে মনে মনে বোধহয় কথাগুলো গুছিয়ে নিলেন প্রিয়ব্রত। “তোকে সেই মেয়েটির কথা বলেছিলাম না? সেই যে কাগজে গত রবিবার দেখেছিলাম, আজ মেয়েটিকে দেখে এলাম।“ এবার রেগে গেল ঋতম। “তোমায় আমি আগেই বলেছিলাম বিয়ে নিয়ে কিছু বলো না। তাছাড়া আমি কিছুই জানলাম না, তুমি দেখতে অব্দি চলে গেলে? এবার বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।“ প্রিয়ব্রত দরজার দিকে তাকিয়ে বলল, “আস্তে কথা বল, তোর মা জেগে যাবে। আর তোর ওপর আমার এটুকু ভরসা আছে যে আমি কাউকে তোর জন্য পছন্দ করলে তুই তাকে একদম অপছন্দ করবি না। তুই তো আমার পুরো কথাটাই শুনছিস না। আমি কি তোর খারাপ চাইব বল?” ঋতম একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেল। বলল, “আমি সেটা বলতে চাইনি, কিন্তু কিছু সিদ্ধান্ত তো আমি নিজে নিতে পারি? সেটুকু স্বাধীনতা তো আমার আছে? আমি এখন বিয়ে করতে চাইছি না।“ প্রিয়ব্রত ছেলেকে খাটে বসিয়ে বললেন, “আমি কি তোকে এখুনি বিয়ে করতে বলছি নাকি? আরে আমি চাই তুই যাকেই বিয়ে করিস না কেন, তাকে আগে চিনে নিয়ে তবে বিয়ে কর, যাতে পরে না আফসোস করতে হয়। আর জানিস তো আজ যাকে দেখতে গিয়েছিলাম, মেয়েটা বেশ ভালো। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বি.এড করছে। বাবা-মা না থাকলেও মামা-মামী খুব যত্নে মানুষ করেছে। প্রিয়ব্রত - Image of a girl who is representative of the character মেঘাশ্রী whose father is প্রিয়ব্রতআর একটা বিষয়, মেয়েটার মুখ দেখে কেন জানি না বড় মায়া হল। তুই একবার মেয়েটিকে দেখবি বুবাই? আমি একটা ছবি এনেছি।“ ঋতম একটু বিরক্তি সহকারে বলল, “বাবা আমার এখন এসব ভালো লাগছে না। তুমি এত রাত অব্দি জেগে থেকে এসব চিন্তা করছো, এবার তোমার শরীরটা খারাপ করলে কি হবে?” প্রিয়ব্রত তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “আরে আমার কিছু হবে না রে।“ ঋতম কি যেন একটা ভেবে নিয়ে বলল, “এক মিনিট, তুমি কার সাথে গিয়েছিলে? যতদূর মনে পড়ছে মা-এর আপত্তি ছিল এখানে। বাবা, মা জানে তুমি মেয়েটিকে দেখতে গিয়েছিলে?” ছেলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মাথা নীচু করে নেয় প্রিয়ব্রত। ঋতম বলে, “ও এবার বুঝলাম, কেন এত রাতে মা ঘুমিয়ে পড়ার পর তুমি এসেছো লুকিয়ে আমার ঘরে।“ প্রিয়ব্রত বলল, “আহা! লুকিয়ে কেন আসব? তুই বল, তোর মায়ের কথা কি মানার মতো? মেয়েটা ভালো হলেই তো হলো। বাবা- মা না থাকলে কি মেয়ে ভালো হতে পারে না?” ঋতম বলল, “দেখো ঠিক- ভুল আমি বিচার করছি না। মায়ের যখন পছন্দ না তো ছাড়ো না।“ “পারলে ছবিটা একবার দেখে নিস।“ বলে বিছানায় ছবি টা রেখে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল প্রিয়ব্রত। “গুড নাইট বা…” ছেলের কথা শোনার জন্য আর দাঁড়ায়নি সে। দরজাটা বন্ধ করে ঋতম মনে মনে ভাবল, ‘বাবা কি দুঃখ পেলেন? ‘ বিছানা থেকে ছবিটা তুলে একবার চোখ বুলিয়ে সেটাকে টেবিলের ড্রয়ারে চালান করে শোয়ার তোরজোর করল সে। সিরিজ তো আর দেখা হল না।

এরপর কি হলো ঋতমের জীবনে ? মা নাকি বাবা – কার মন রাখতে পারল সে? জানতে হলে পড়ুন শেষ বলে কিছু নেই – পর্ব দুই

শুধু ওয়েবসাইট নয়, আপনারা আরো অতিরিক্ত কিছু লেখা পেতে ও অনুলিপির আপডেট পেতে ফলো করুন ইন্সটাগ্রামে

 

2 Replies to “শেষ বলে কিছু নেই – পর্ব এক”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *